সুখে থাকার উপায়
চারিদিকে এত অশান্তি, এত উদ্বেগ, আর দুশ্চিন্তাকে দূরে সরিয়ে জীবনে সুখী হওয়া কি এত সহজ বিষয়? সূত্র মেনে কি আসলে জীবনে সুখী হওয়া যায়? এসব প্রশ্ন হর হামেশাই আমাদের মস্তিষ্কে ঘুরপাক খেতে থাকে। তবে জেনে রাখুন সুখী হওয়া মূলত একটি অভ্যাসের বিষয়। সুখ জিনিসটা এমনি এমনি কারো জীবনে চলে আসে না। কিছু সূত্র বা উপায় অবলম্বন করার মাধ্যমে আপনি সত্যিকারে অর্থই সুখী হওয়ার পথে এগিয়ে যেতে পারেন। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক জীবনে সুখী হওয়ার কয়েকটি সহজ উপায় সম্পর্কে।
মন ভালো রাখার উপায়
দেখতে দেখতে একটার পর একটা বছর চলে যায় মানুষের জীবন থেকে। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখা হয়? যে বছরগুলো চলে গেল জীবন থেকে সে প্রত্যেকটি বছরই কি আরামদায় কিংবা সেরা বছর ছিল? অধিকাংশ মানুষেরই উত্তর আসবে না! কেউ হয়তো বলবে যে বছর আমি এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ফাইভ পেয়েছিলাম সেই বছরটা আমার জীবনের সেরা বছর ছিল। কেউ বলবে যে বছর আমি স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম সেই বছরটা ছিল আমার জীবনে সেরা বছর।তাহলে দেখা যাচ্ছে এতগুলো বছর পার করে এসে জীবনের মাত্র তিনটি বছরের কথাই সবার মনে থাকে। সেই বছরের আনন্দের কথাগুলো ভাবতে এখনো খুব ভালো লাগে। তার মানে হল একজন মানুষ যদি গড়ে ৬০ বছর বাঁচেন তবে তার জীবনের আনন্দময় ও স্মরণীয় মুহূর্ত ছিল সব মিলিয়ে মাত্র পাঁচ বছর এর মত। তবে বাকি ৫৫ বছর তার জীবন থেকে এমনি হারিয়ে গিয়েছে। সেই বাকি ৫৫ বছরে তার জীবনে উল্লেখযোগ্য কিছুই ঘটে নি। তাই আজকে আমাদের এই আলোচনাটি মানুষের জীবনের প্রত্যেকটা মুহূর্তকে সুখী আনন্দময় ও স্মরণীয় করে রাখার জন্য লেখা হয়েছে।
মানসিকভাবে ভালো থাকার উপায়
১০০% সুখী মানুষ খুঁজে পাওয়া বড়ই দুষ্কর। কোন মানুষই বুকে হাত দিয়ে বলতে পারেনা যে সে পুরোপুরি সবদিক থেকে সুখী। তবে আমরা চাইলে আমাদের কিছু অভ্যাস কিছু উপায় এবং নিজেকে কিছুটা পরিবর্তন এর মাধ্যমে নিজেদেরকে সুখী বলে দাবি করতে পারি। জীবনের প্রতিটা মুহূর্তকে আনন্দময় করে তুলতে পারি। আর এজন্য আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই বাঁচার মতো বাঁচতে হবে। কেননা জীবনটা কিন্তু খুবই অল্প সময়ের। ধরো তুমি যদি ৬০ বছর বেঁচে থাকো তবে তুমি তার মধ্যে তোমার জীবনের এক তৃতীয় অংশ সময় পার করেই ফেলেছ। জীবনে এই এক তৃতীয় অংশ সময়ে তুমি কি তোমার নিজের পাশাপাশি এই পৃথিবীর জন্য, সমাজের জন্য, দেশের জন্য কিংবা তোমার পাশের মানুষগুলোর জন্য কোন কিছুই করতে পেরেছো? এমনকি কিছু করতে পেরেছ যেটি তোমার অবর্তমানে সমাজের প্রতিটি মানুষ তোমাকে স্মরণ করবে? চলো তবে আজকেই আমরা পরিকল্পনা করে ফেলি জীবনে বাকি সময়টুকু কিভাবে আনন্দময় করে তুলতে পারি এবং কিভাবে এক সুন্দর মানব জীবন ও পৃথিবী নিজ হাতে গড়ে তুলতে পারি।
নিজে ভালো থাকার উপায়
মাত্র কয়েকটি উপায় অবলম্বন করে নিজেকে ভালো রাখতে অথবা জীবনে সুখী হওয়া যায়। চলুন তবে কথা না বাড়িয়ে দেখেনি সেই উপায় গুলো সম্পর্কে।
১. নিজেকে ভালবাসতে শেখো
তুমি যতদিন নিজেকে ভালবাসতে না শিখবে ততদিন পর্যন্ত তুমি তোমার জীবনকে আনন্দময় করে তুলতে পারবে না। সুতরাং তুমি যদি নিজেকে ভালোবাসো তবে অবশ্যই তুমি জীবনে সুখী হতে পারবে। আর জীবনে সুখী হতে হলে নিশ্চয়ই তুমি এমন কোন কাজ করবে না যেটা পরবর্তী জীবনে তোমার জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, অথবা তোমাকে কষ্ট দিবে। আর এজন্য নিজেকে ভালবাসলে সব সময় তুমি নিজের স্বাস্থ, পড়াশোনা ও জীবনের প্রতি আরো বেশি যত্নশীল হতে হবে। নিজেকে ভালোবাসার পাশাপাশি নিজের উপর আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে। তাহলে জীবনে পাহাড় সম বাধা বিপত্তি আসলে তোমাকে তলাতে পারবে না।
২. জীবনের প্রতিটা মুহূর্তকে মূল্য দাও
জীবনে কমবেশি আমরা সবাই অসুস্থ হয়ে থাকি। অনেক সময় আমাদেরকে কিংবা আমাদের প্রিয়জনদের হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। তাই কম বেশি আমরা সবাই হাসপাতালে গিয়েছি। তুমি কি কখনো ক্যান্সার হাসপাতালে গিয়েছো? সেখানে গেলে অবশ্যই দেখতে পাবে তোমার মত সমবয়সী অনেকেই ক্যান্সারের সাথে লড়াই করছে। তারা তোমার বয়সেই জেনে গিয়েছে তারা হয়তো আর বেশিদিন এই পৃথিবীতে নেই! আর তাদের এই জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত তাদের কাছে অনেক বেশি মূল্যবান। তাই জীবনের প্রতিটা মুহূর্তকে উপভোগ করে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে তারা। তেমনি আমাদের সবার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত অনেক বেশি মূল্যবান। কেননা আমরা কেউ জানি না আর কতদিন বাঁচবো এই পৃথিবীতে। যে সময়টা চলে যাচ্ছে সেটা আর কোনদিন ফিরে আসবেনা। ধরো এখন তুমি স্কুলে পড়াশোনা করছো, আর এই স্কুল জীবনটাকেই কিন্তু একদিন তুমি ভীষণভাবে মিস করবে। তাই জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে মূল্য দাও। এবং জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই আনন্দময় করে তোলার চেষ্টা করো।
আরো পড়ুন দরিদ্র মুক্ত হওয়ার সহজ উপায় https://www.sbdfoodtips.xyz/2022/11/By-changing-these-6-habits-you-can-be-free-from-poverty-Update-News.html
৩. আনন্দ এবং কষ্ট দুটোই আপেক্ষিক
আনন্দ এবং কষ্ট এই বিষয়গুলো একেবারেই আপেক্ষিক। কারো কাছে আনন্দের থাকা মানে কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে বসে সূর্যাস্ত দেখা। আবার কারো কাছে সারাদিন পরিশ্রমের পর উপার্জিত টাকা দিয়ে মার জন্য খাবার কিনে নিয়ে বাড়ি ফেরাটাই অনেক আনন্দের। ঠিক তেমনি কষ্টও আপেক্ষিক। তাই সোশ্যাল মিডিয়া কারো আনন্দে থাকার পোস্ট বা ছবি দেখে হতাশ হয়ো না। কেননা তুমি নিজে একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাবে, তুমি এই এই যে রোজ রোজ বাসায় বসে ভাত খাচ্ছ সেই ছবি কি সোশ্যাল মিডিয়ায় দিচ্ছ? না। কিন্তু একদিন কোনো ভালো রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে সেই ছবিটা কিন্তু ঠিকই দিচ্ছো। ঠিক তেমনি সোশ্যাল মিডিয়ায় যাদের আনন্দে থাকতে দেখছো তারাও সব সময় আনন্দে আছে এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। সবার জীবনেই আনন্দ ও কষ্ট দুই আছে। এই পৃথিবীতে সবাইকে কষ্টের সময় পার করতে হয়। হয়তো আমরা অন্যের সেই কষ্টটাকে সামনাসামনি দেখতে পাইনা অথবা অনুভব করতে পারি না।
৪. আত্তসন্তুষ্টি আনন্দে থাকার মূলমন্ত্র
জীবনে সুখী হওয়ার একটি মূলমন্ত্র হলো আত্তসন্তুষ্টি অর্থাৎ তোমার যা আছে তাই নিয়েই সন্তুষ্ট থাকো। হয়তো তোমার এক বন্ধু আইফোন কিনেছে কিন্তু তোমার iphone কেনার সামর্থ্য নেই। তুমি সে কারণে মন খারাপ করে আছো। কিন্তু তুমি একটু খেয়াল করলেই আশেপাশে দেখতে পাবে তোমার বয়সে অনেকেই মোবাইল কেনা তো দূরের কথা তারা তাদের মৌলিক চাহিদা গুলোই পূরণ করতে পারছে না। সে হয়তো তোমার মত ভাল স্কুল কলেজে পড়তে পারছে না। তোমার মত চাইলেই অবসর কাটাতে পারছেনা। গল্পের বই কিনে পড়তে পারছে না। তাই তুমি যা পেয়েছ তাই নিয়েই সন্তুষ্ট থাকো। সবসময় মনে রাখবে এই পৃথিবীতে তোমার চেয়ে অনেক খারাপ অবস্থার লোক আছে।
৫. সুখে থাকার শক্তিশালী অস্ত্র সর্বদা মুখে হাসি
যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে স্বাভাবিকভাবে হাসিখুশি রাখাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। জীবনে সুখী হওয়ার একটা শক্তিশালী অস্ত্র হল মুখে সর্বদা হাসি রাখা। হাসি হলো সুখের একটি বহি প্রকাশ। তাই যেকোনো অবস্থায় নিজেকে হাসি খুশি রাখাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৬. পরিবারকে বেশি সময় দেয়া
এই পৃথিবীতে তুমি নিজে ব্যতীত তোমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে তোমার পরিবার। তাই তোমাকে যারা ভালোবাসে সেই মানুষগুলোকে বেশি করে সময় দাও। বিশেষ করে সারাদিনের সকল কাজ শেষে পরিবার তোমার আপন মানুষদের সময় দাও। যেখানে সারা দিনের ক্লান্তি অবসাদ ভুলে থাকা যায়। বাবা মা ভাই বোনদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোল। এতে জীবনে যে কোন সমস্যায় তুমি পরিবারের সাথে মোকাবেলা করতে পারবে। একাকীত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি মহা ঔষধ হলো পরিবারকে সময় দেয়া। কখনো তোমার নিজেকে একা মনে করবে না। সব সময় মনে হবে তোমার পাশে তোমার পরিবার আছে।
৭. বন্ধুত্বের মর্যাদা রেখো
এই পৃথিবীতে কে আমাদের বাবা-মা, ভাই বোন হবেন এটা নির্বাচন করার সুযোগ অবশ্য আমাদের নেই। কেননা আমাদের জন্মের আগে সেটা স্রষ্টা ঠিক করে দিয়েছেন। কিন্তু বন্ধু নির্বাচনে সেই সুযোগ তোমার অবশ্যই আছে। জীবনে প্রতিটি মুহূর্তেই তোমার বন্ধুর প্রয়োজন হবে। কেননা এই পৃথিবীতে যে কোন লড়াই একা লড়া সম্ভব না। পাশে বন্ধুর প্রয়োজন অনিবার্য। তাই জীবনে সব সময় বন্ধুত্বের মর্যাদা রাখবার চেষ্টা কর। তোমার বন্ধু কোন সাফল্যে ঈর্ষান্বিত না হয়ে তাকে আরো সাধুবাদ জানাও। তাকে আরো সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য কর। দেখবে সেও তোমাকে তোমার জীবনে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে।
৮. তিনটি জিনিসকে না বল
হিংসা, ঘৃণা ও অহংকার এই তিনটি জিনিসকে ত্যাগ কর। কখনো কাউকে হিংসা করো না। কারো সফলতায় হিংসা না করে বরং তাকে আরো সামনে এগিয়ে যাওয়ার উৎসাহ দাও। সমাজের যে শ্রেণীর বা যেকোনো সমাজের মানুষ হোক না কেন কাউকে ঘৃণা করোনা। বরং তাকে ভালোবাসো। তুমি দেশের নামকরা স্কুল কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় পড়েছো বিধায় অহংকার করো না। কেননা যে তোমার মত হতে পারেনি, হয়তো সে তোমার মত সুযোগ পায়নি। আবার তোমার মত সুযোগ না পেয়েও হয়তো দেখবে তাদের অনেকে তোমার থেকে অনেক এগিয়ে গেছে। তোমার মত সুযোগ পেলে হয়তো তারা আরো অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারত। তাই হিংসা. ঘৃণা ও অহংকার কে জীবন থেকে মুছে দিয়ে সকল মানুষের সাথে এক কাতারে মিশে যাও। দেখবে পৃথিবীটা তোমার মতই সুন্দর হয়ে উঠবে ।
Disclaimer
একটা মানুষের এই সামান্য কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে জীবনে প্রতিটা মুহূর্ত সুন্দর ও সুখীময় করে তোলা সম্ভব। আমাদের আজকের আলোচনাটি এই পর্যন্তই। আশা করি আপনারা অবশ্যই জীবনে সুখী হওয়ার উপায় গুলো সম্পর্কে একটু হলেও বুঝতে পেরেছেন। লেখাটি ভালো লাগলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।