জরায়ু ক্যান্সার কী? জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার কারণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে যানুন
জরায়ু মেয়েদের শরীরে একটি অর্গান। যেটাকে আমরা সহজ ভাষায় বাচ্চাদানী বলে থাকি। অর্থাৎ যেখানে বাচ্চা বড় হয়। আর এই জরায়ু মুখে অনেক কিছুই হয়। বিশেষ করে অনেক ট্রমা হয়। যার কারণে জরায়ু মুখে ক্যান্সারটা বেশি হয়ে থাকে। মেয়েদের জরায়ু মুখে এক ধরনের পাতলা আবরণ থাকে। মূলত এই আবরণ থেকেই ক্যান্সারের সৃষ্টি হয়ে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সারা বিশ্বে প্রতি বছরে প্রায় ৫ লাখ ৭০ হাজার নারী এই জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। তার ভিতরে প্রায় তিন লাখ দশ হাজার নারী এর ফলে মারাও যায়। আর এই ঘটনার প্রায় 90% মৃত্যুই হচ্ছে নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। যেখানে মানুষ অতটা শিক্ষিত এবং সচেতন নয়।
মেয়েদের জরায়ু ক্যান্সার কেন হয়?
মেয়েদের জরায়ু মুখে ক্যান্সার হওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। যা অনেকেরই অজ্ঞাত। অসচেতনতা এবং অজ্ঞতার কারণেই বেশিরভাগ মেয়েদের ক্যান্সার হয়ে থাকে। তাই জরায়ু ক্যান্সার সম্পর্কে মানুষেরই সঠিক জ্ঞান থাকা অতন্ত জরুরি। অনেক মেয়েরা আছে যাদের জরায়ুতে ক্যান্সার হলেও তারা বুঝতেই পারেনা। এবং এটি যখন মারাত্মক আকার ধারণ করে তখন বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়ে। এই রোগটি হলে একটি মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। তাই আসুন জেনে নিই মেয়েদের জরায়ু ক্যান্সার এর কারণ গুলো সম্পর্কে।
(১) অল্প বয়সে বিয়ে করলে
অল্প বয়সে বিয়ে করলে অথবা যৌন কাজ করা মেয়েদের জরায়ু ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা সব থেকে বেশি। বিশেষ করে ৯থেকে ১৫ বছর বয়সীরা এই রোগে আক্রান্ত বেশি হয়।
(২) অল্প বয়সে বাচ্চা প্রসব
অনেক মেয়ে আছে যাদের খুবই অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া হয়। এটি সমাজ এবং জাতির জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ। অল্প বয়সে বিবাহিত মেয়েদের অল্প বয়সেই বাচ্চা প্রসব করার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আর এটি হতে পারে জরায়ু ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। সুতরাং অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এবং সেই সাথে প্রতিটা মেয়ের জরায়ু ক্যান্সার সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকতে হবে।
(৩) ঘন ঘন বাচ্চা নেয়া
অনেক লোক আছে যারা বিবাহিত জীবন সম্পর্কে অঙ্গ। তারা শুধু নিজেদের কামনা বাড়ানোর কথাই মাথায় রাখে। কিন্তু এটি একটি নারীর ক্ষেত্রে অত্যন্ত ভয়ংকর। কেননা বেশি মাত্রায় সহবাস করা বা ঘন ঘন বাচ্চা নেওয়া এটি হতে পারে জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার কারণ। এটি একটি মেয়ের মৃত্যুর কারণ পর্যন্ত হতে পারে। সুতরাং সঠিক জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং এই বিষয়ে সঠিক জ্ঞান থাকতে হবে।
(৪) বহুগামীতা
সমাজে এমনও নারী দেখতে পাওয়া যায় যারা বহুগামীতার সাথে সম্পৃক্ত। এসব নারীদের জরুরি ক্যান্সার সহ আরো বিভিন্ন ধরনের মারাত্মক ভয়াবহ রোগ হওয়ার সম্ভবনা অনেক বেশি থাকে। এবং সেই সাথে এদের সংস্পর্শে আসা পুরুষদেরও বিভিন্ন মরণঘাতী অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং সমাজের বহুগামীতায় যুক্ত মেয়েদের সাথে মেলামেশা করা একদমই বন্ধ করতে হবে এবং সেই সাথে এটির বিরুদ্ধে সচেতন হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
(৫) জন্মবিরতি করণ পিল সেবন করা
বিবাহিত জীবনে প্রায় প্রতিটি মেয়ের জন্মবিরতিকরণ পিল খাওয়াটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। কিন্তু আসলে অনেকেই জানে না জন্মবিরতিকরণ পিল এর একটি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা ক্ষতিকর দিক রয়েছে। অনেকদিন ধরে জন্ম বিরতিকরণ পিল খাওয়ার ফলে হতে পারে জরায়ু ক্যান্সার। সুতরাং প্রতিটি মেয়েদের এই বিষয় অবশ্যই সচেতন হতে হবে। পিল ছাড়াও জন্ম নিয়ন্ত্রণে আরো অনেক নিরাপদ পদ্ধতির রয়েছে। বিকল্প হিসেবে সেসব পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে।
(৬) পিরিয়ডে অস্বাস্থ্যকর ভাবে থাকা
অনেক মেয়ে এখনো এ বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। লজ্জা অথবা ভয় এই বিষয়ে কারো সাথে শেয়ারও করতে পারে না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি লজ্জ্যা অথবা ভয়ের কোন বিষয় নয়। এটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক নিয়ম। প্রতিটি মেয়েদের মাসে একবার করে পিরিয়ড হয়ে থাকে। এই সময় অস্বাস্থ্যকর ভাবে থাকাটা হতে পারে তার জন্য মারাত্মক ক্ষতি।এই সময়ে মেয়েদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং স্বাস্থ্যকর ভাবে থাকাটা অত্যন্ত জরুরী। বিশেষ করে নিয়মিত প্যড চেঞ্জ করা, বেশি মাত্রায় পানি ব্যবহার করা সহ আরো বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে যেগুলো মেনে চলাটা একান্ত জরুরী। আর এই নিয়মগুলো মেনে না চলার কারণে হতে পারে মরনঘাতি এই অসুখটি।
(৭) অপুষ্টির কারণে
অপুষ্টি কারণেও হতে পারে একটা মেয়ের জরায়ু ক্যান্সারের কারণ। মানুষের শরীরে যখন পুষ্টি ঘাটতি দেখা দেয় তখন তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকাংশে কমে যায়। আর যার কারণে হতে পারে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা। এর ভিতর ক্যান্সারও অন্যতম। সুতরাং প্রত্যেকটি মানুষের পুষ্টি ঘাটতি পূরণ করতে হবে এবং সেই সাথে স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
যেসব লক্ষণে বুঝবেন জরায়ু ক্যান্সার
ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার রোগীদের প্রথম দিকে তেমন কোনো লক্ষণই দেখা যায় না। তবে এই রোগে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ৭০ ভাগ ক্ষেত্রেই এই রোগ এডভান্সস্টেজ ধরা পড়ে। আর তারপর যখন এই রোগটি ধরা পড়ে তখন সেটা অ্যাডভান্স হয়ে যায়। যে কারণে ক্যান্সারকে সাইলেন্ট কিলারও বলা হয়ে থাকে। তবে বেশ কয়েকটি লক্ষণ রয়েছে যা দেখে বুঝতে পারবেন যে জ্বরের ক্যান্সার এর সম্ভাবনা রয়েছে।
>> নিন্মাঙ্গের চারপাশে চাপ লাগা কিংবা বহুমূত্র ত্যাগ করা। কোন মেয়ের এমন সমস্যা দেখা দিলে তার জরায়ু ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আরো পড়ুন শুক্রাণু বাড়াতে রসুনের কার্যকারিতা https://www.sbdfoodtips.xyz/2022/11/Effectiveness-of-garlic-to-increase-sperm-Health-Tips.html
>> বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস, হালকা খাবার পর পেট ভর্তি লাগা, অস্বস্তি লাগা ইত্যাদি মেয়েদের পেটের যদি কোন সমস্যা খুব বেশি হয়। তাহলে তা হতে পারে জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ।
>> যদি কোন মেয়ের হঠাৎ করে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পায়, অথবা কমে যায়, এসব পরিবর্তন হলে তার জরায়ু ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তবে অনেক ক্ষেত্রে প্রথম দিকে রোগীর সাদা স্রাব হতে পারে অথবা গন্ধযুক্ত বা রক্ত মিশ্রিত সাদা স্রাব হয়ে থাকে।
>> যৌন সম্পর্কে রক্ত যাওয়াই ঠিক হতে পারে জরায়ু ক্যান্সারের একটি অন্যতম কারণ। এর জন্য সহবাস করায় রক্ত গেলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
>> মেয়েদের পেটে অতিরিক্ত ব্যথা কিংবা পেট ফুলে থাকা, বমি বমি ভাব কিংবা বারবার বমি হওয়া এটিও একটি বিশেষ লক্ষণ জরায়ু ক্যান্সারের।
>> অনিয়মিত পিরিয়ড হওয়া, অথবা দুই মাসের মাঝে ঘন ঘন রক্তশ্রাব অথবা মাসিক ঘন ঘন হওয়ার কারণে তারিখ শনাক্ত করতে না পারা।
>> মেনোপোজ হওয়ার পর যদিও কোন নারী বারবার রক্তক্ষরণ দেখা দেয় তাহলে হতে পারে জরায়ু ক্যান্সারের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ । এক্ষেত্রে দ্রুত তাকে ডাক্তারের চিকিৎসা নিতে হবে।
>> এছাড়াও অনেক সময় তলপেটে ব্যথা, ব্যাকপেইন, পা ফুলে যাওয়া, অথবা পায়ে রস আসা এসব কারণ ও জরায়ু ক্যান্সারের অ্যাডভান্স স্টেজের লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়।
জরায়ু মুখে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি যাদের বেশি
বিশেষ করে যেসব নারী অথবা মেয়েরা এসব বিষয়ে অজ্ঞ এবং অসচেতন এসব মানুষের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। সুতরাং অবশ্যই প্রত্যেকটা মেয়েদের ক্যান্সার হওয়ার কারণ এবং লক্ষণ সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকতে হবে। সেই সাথে প্রয়োজনীয় সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বর্তমান সমাজে অনেকেই আছে যারা লজ্জা অথবা ভয়ে এসব বিষয় কারো সাথে শেয়ার করতে চায়না। যে কারণে পিছিয়ে যাচ্ছে তারা শিক্ষার দিক থেকে। আর এজন্যই এই রোগটির আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। সুতরাং অবশ্যই আমাদের সচেতন হতে হবে।
জরায়ু মুখের ক্যানসার প্রতিরোধে করণীয়
জরায়ু মুখে ক্যান্সার প্রতিরোধে কিছু বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। বিশেষ করে ১৮ বছরের আগে কোন মেয়ের বিয়ে না দেওয়া। জন্ম নিয়ন্ত্রক পিল পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে সেবন না করা। বহুগামীতা প্রতিরোধে, ধূমপান, সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ কিংবা অপরিচ্ছন্নতা থেকে নিজেকে সচেতন রাখতে হবে। এছাড়াও এগুলো এড়িয়ে চলা ছাড়া সময় মতো টিকা নিতে হবে। জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে অনেকেই থাকে যারা চিকিৎসার ব্যাপারে উদাসীন। আর এক্ষেত্রে সকলের ভিতর সচেতনতা গড়ে তোলাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দেখা যায় তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ধরে এই রোগে আক্রান্ত কিংবা এডভান্সস্টেজে বিভিন্ন জটিল উপসর্গ নিয়ে ভুগছে। কিন্তু জনসচেতনতা অভাবে তারা তার চিকিৎসা করাতে পারছে না। বর্তমানে আমাদের দেশেও এই সমস্যার প্রকোপ অনেক বেশি বেড়ে গেছে। সুতরাং এটি লজ্জার কোন বিষয় নয়। উপসর্গ দেখা মাত্রই দ্রুত অভিজ্ঞ শীর্ষকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।
Disclaimer
বন্ধুরা আশা করি আপনারা জরায়ু মুখে ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার কারণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে মোটামুটি জানতে পেরেছেন। এ লেখাটি সম্পর্কে আপনাদের যদি আরও কিছু জানার থাকে তবে অবশ্যই কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। এতক্ষণ ধরে লেখাটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।