খেজুরের পরিচিতি
খেজুর আমাদের সবার পরিচিত এবং সুস্বাদু একটি ফল। খেজুর শরীরে শক্তি বৃদ্ধির একটি ভালো উৎস। সুতরাং খেজুর খাওয়ার সাথে সাথে শরীরে ক্লান্তি দূর হয়ে সতেজ ভাব চলে আসে। খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি৬, যা মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কে বৃদ্ধি করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।খেজুর পুষ্টিতে এতটাই সমৃদ্ধ যে, এটিকে ওয়ান্ডারফল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আয়রন, খনিজ, ক্যালসিয়াম, এসিড, ভিটামিন, ফসফরাস সমৃদ্ধ খেজুর আপনার স্বাস্থ্যের খেয়াল ও সৌন্দর্যকে বৃদ্ধি করে।
খেজুরের প্রকারভে
খেজুরের আরবি নাম হলো তুমুর। বাজারে বিভিন্ন জাতের খেজুর পাওয়া যায়। এগুলোর নামও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন আজুয়া, সাগি, আনবারা, সাফাওয়ি,খালাস, মুসকানী, বেরোহি, চালাবি, মাব্রুম, ডেইরি, সেফরি ইত্যাদি। নানা নাজাতের এসব খেজুরের আকার এবং মান ভেদে প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ১৫০ রিয়াল পর্যন্ত হয়ে থাকে। খেজুর সাধারণত রমজান মাস থেকে শুরু করে শাওয়াল মাস পর্যন্ত থাকে। যা প্যাকেটজাত করে সারা পৃথিবীতে পাঠানো হয়।
খেজুরের উপকারিতা ও পুষ্টিগুন
পুষ্টিগুণে ভরা খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, আঁশ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ও জিংক। খেজুর একজন সুস্থ মানুষের শরীরে আয়রনের চাহিদা গড়ে মিলে প্রায় ১১ ভাগ পূরণ করতে সক্ষম। খেজুরে প্রতি ৩০ গ্রাম পরিমাণে আছে ৯০ ক্যালরি ১ গ্রাম প্রোটিন এবং ১৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ২.৮ গ্রাম ফাইবার। এছাড়াও খেজুরে আরও অনেক পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।তাই প্রতিদিন নিয়মিত খেতে পারেন খেজুর।
>> ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ও প্রাকৃতিক আঁশে পূর্ণ খেজুরে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা। তাই যারা নিয়মিত খেজুর খেয়ে থাকেন তাদের ক্যান্সারের ঝুঁকিটা অনেক কম থাকে।
>> হৃদপিণ্ডের যত্ন নেয়
যাদের দুর্বল হৃদপিণ্ড তাদের ক্ষেত্রে খেজুর একটি উপকারী খাবার। এটি খাওয়ার ফলে হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। হৃদপিন্ডের সবচেয়ে নিরাপদ ওষুধ হল খেজুর।
>> মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি করে
খেজুর বুকে দুধ খাওয়ানো মায়েদের জন্য একটি আদর্শ খাবার। যা মায়ের দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি করার পাশাপাশি পুষ্টিগুণ বাড়িয়ে দেয় অনেকাংশে, যাতে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় দ্বিগুণ হারে।
>> হায় গঠনে সহায়ক
খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকায় এটি হাড় গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। যাদের হাড় অথবা দাঁতের সমস্যা আছে তারা পর্যাপ্ত পরিমাণে খেজুর খেয়ে সেই সমস্যা সমাধান করতে পারে।
>> দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে
যাদের শরীরে ভিটামিন এ এর ঘাটতি রয়েছে অথবা দৃষ্টিশক্তি দুর্বল তাদের ক্ষেত্রে খেজুর একটি আদর্শ খাবার। খেজুর খাওয়ার ফলে আপনার দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই যাদের দৃষ্টিশক্তি দুর্বল তারা নিয়মিত খেজুর খেতে পারেন।
রোজ খেজুর খেলে যেসব রোগ থেকে মুক্তি মিলবে
আরো পড়ুন মধু কেন খাবেন? জেনে নিন মধু খাওয়ার উপকারিতা https://www.sbdfoodtips.xyz/2022/07/why-eat-honey-learn-benefits-of-eating.html
পুষ্টিবিদদের মতে শরীরে প্রয়োজনীয় আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে খেজুর একটি আদর্শ খাবার। এছাড়াও ডায়াবেটিস থাকলে প্রচলিত খেজুরের বদলে শুকনো খেজুর ডায়েটে রাখতে পারেন। নিয়মিত খেজুর খাওয়ার ফলে শরীরে মুক্তি মিলতে পারে বিভিন্ন অসুখের। আসুন তবে জেনে নিই রোজ খেজুর খেলে যেসব রোগ থেকে মুক্তি মিলবে।
>> উচ্চ রক্তচাপ কমায়
প্রতিটি খেজুরে রয়েছে প্রায় ২০ থেকে ২৫ মিলিগ্রামের মত ম্যাগনেসিয়াম। যা মানুষের শরীরে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। সুতরাং যাদের শরীরে উচ্চ রক্তচাপ বা প্রেসার এর সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে খেজুর একটি আদর্শ খাবার। প্রতিদিন খেজুর খাওয়ার ফলে মুক্তি মিলতে পারে আপনার উচ্চ রক্তচাপের।
>> রক্তস্বল্পতা দূর করে
যাদের শরীরে রক্তস্বল্পতা রয়েছে তাদের জন্য খেজুর একটি গুরুত্বপূর্ন খাবার।একজন সুস্থ মানুষের শরীরে গড়ে যতটুকু আয়রন প্রয়োজন তার প্রায় ১১ ভাগই পূরণ করে খেজুর। সুতরাং যাদের শরীরের রক্তস্বল্পতা দেখা দেয় তারা পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রতিদিন খেজুর খেতে পারেন। এতে আপনার রক্তস্বল্পতা দূর হয়ে যাবে।
>> চিনির বিকল্প খেজুর
যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যায় চিনি খেতে ভয় পান, তাদের ক্ষেত্রে চিনির বিকল্পে খেজুর খেতে পারেন। অথবা চিনির রস ও গুড় খাওয়া যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়াটা উচিত নয়।
>> কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
কোষ্ঠকাঠিন্য একটি মারাত্মক সমস্যা। বিশেষ করে যদি অনেকদিনের পুরনো হয় তবে সমস্যা আরও দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পায়।কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ে সমস্যায় খেজুর একটি ভালো ওষুধ হিসেবে কাজ করে। যাদের এই সমস্যাটি আছে তারা রাতে পানিতে খেজুর ভিজিয়ে রেখে পরদিন সকালে খেজুর ভেজানো পানি পান করতে পারেন। এতে দূর হয়ে যাবে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা। তবে এটি নিয়মিত কয়েকদিন করতে হবে।
সকালে খালিপেটে খেজুর খেলে যে উপকার পাবেন
সকালে খালি পেটে খেজুর খাওয়ার রয়েছে নানা উপকারিতা। বিশেষ করে শরীরে কর্মশক্তি বাড়াতে, রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করতে ও ওজন রাশ করতে সকালে খালি পেটে খেজুর খাওয়া যেতে পারে। খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা শরীরের জন্য অত্যন্ত দরকার। সুতরাং যদি সকালে খালি পেটে খেজুর খেতে পারেন তবে মিলবে এইসব পুষ্টি চাহিদা। তবে অবাক করা কথা হল খেজুরে এত পুষ্টিগুণ থাকা সত্ত্বেও এতে নেই কোন কোলেস্টেরল বা চর্বি। যে কারণে যেকোনো মানুষ এই ফলটি খেতে পারেন নির্দ্বিধায়।
দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত?
খেজুর একটি অত্যাধিক পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার। খেজুরের নানা উপকারিতা থাকলেও এটি অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া উচিত নয়। কেননা অতিরিক্ত যে কোন খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য বিপদজনক। দিনে চার থেকে পাঁচটি খেজুর খেতে পারেন। তবে যাদের হজম শক্তিপ্রখর বা অনেক বেশি পরিমাণে খাবার খেতে পারেন তাদের ক্ষেত্রে ৮ থেকে ১০ টি খেজুর খাওয়া যথেষ্ট। এর বেশি খেজুর খাওয়া কখনোই উচিত নয়।
খেজুর খাওয়ার নিয়ম
মানুষ দিনের বিভিন্ন সময় খেজুর খেয়ে থাকে। তবে সকালে খালি পেটে খেজুর খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। এতে সারাদিনে শরিরের জন্য প্রচুর শক্তি পাওয়া যায়। ব্যায়াম করার কমপক্ষে আধা ঘন্টা আগে আপনি খেজুর খেতে পারেন। এছাড়া অনেকে বিকালে জলখাবারের সাথে খেজুর খেয়ে থাকে। তবে রোজার মাসে ইফতারের অবশ্যই খেজুর রাখা যেতে পারে। এতে সারাদিনের পুষ্টি ঘাটতি অল্প সময়ের ভিতরে পূরণ হতে পারে।
ইফতারে খেজুর খাবেন যে কারণে
খেজুরের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে সবাই কম বেশি জানেন। তবে রমজান মাসে খেজুরের চাহিদা অন্যান্য মাসের থেকে সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে।এই সময় কম বেশি সবাই খেজুর খেয়ে থাকে। কেননা সারাদিনের ক্লান্তি অবসাদ এবং পুষ্টি ঘাটতি পূরণ করতে খেজুরের বিকল্প আর নেই। খেজুর খাওয়ার অল্প সময়ের ভিতরে শরীরের শক্তির যোগান দেয় এবং সারাদিনের যত পুষ্টি ঘাটতি আছে তা সহজেই পূরণ করে দেয়। সুতরাং রোজার মাসে অবশ্যই খেজুর খেতে পারেন। খেজুর একটি উচ্চ শক্তি সম্পন্ন খাবার হওয়ার কারণে এটি ইফতারের অবশ্যই খাওয়া উচিত।
সবচেয়ে ভালো খেজুর কোনটা?
বাজারে বিভিন্ন ধরনের খেজুর পাওয়া যায়। তবে তার ভিতর আজওয়া খেজুর অনেক উৎকৃষ্ট মানের। এটি সবথেকে দামি খেজুর বলা যেতে পারে। আজওয়া খেজুরের ভিতর আবার অনেক পদ রয়েছে। সরাসরি সৌদি আরব থেকে এই খেজুর আমদানি করে আনা হয়। বাংলাদেশ টাকায় প্রতি কেজিতে ৮০০ থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। মদিনায় এই খেজুরের ফলন অনেক বেশি হয়। এই খেজুরগুলো দেখতে কালো এবং মাঝারি আকৃতির হয়ে থাকে। পুষ্টি এবং মানের দিক থেকে অনেক উপরে এই আজওয়া খেজুর।এই খেজুর খেতে অনেক সুস্বাদু এবং নরম।এগুলো আকারে বেশি বড় হয় না। তবে উপরে সাদা রেখা দেখতে পাওয়া যায়। আর এই বৈশিষ্ট্য গুলোই আপনাকে আজোয়া খেজুর বাছাই করতে সাহায্য করবে।
খেজুর খাওয়ার অপকারিতা
খেজুরের হাজারো উপকারিতা থাকলে ও এর রয়েছে সামান্য কিছু অপকারিতা। বিশেষ করে ডায়াবেটিসের রোগীদের অধিক পরিমাণে খেজুর খাওয়ার ফলে শরীরে সুগার লেভেল বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই এটি বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়। যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা কেবলমাত্র ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এটি খেতে পারেন। অতিরিক্ত খেজুর খাওয়ায় পেটে ব্যথা ও গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যা অনেক সময় ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে। আবার অনেকের অতিরিক্ত খেজুর খাওয়ার পরে এলার্জির সমস্যা দেখা দেয়।
Disclaimer
সর্বশেষে এটা বলা যায় যে খেজুর অনেক পুষ্টিসম্পন্ন একটি খাবার। যা আমাদের বিভিন্ন পুষ্টি ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে। তথাপি এটি অত্যাধিক পরিমাণে কখনোই খাওয়া উচিত নয়। তবে নিয়মিত এবং পরিমাণ মতো খেজুর খাওয়ার ফলে মিলতে পারে শরীরে নানা ধরনের উপকারিতা।