যে কারণে ধ্বংস হতে পারে আপনার ক্যারিয়ার
প্রত্যেক মানুষেই চায় তার নিজের লাইফটাকে সুন্দর করে সাজাতে। আর এজন্যই এত ছোটাছুটি, ব্যস্ততা এবং কঠোর পরিশ্রম। অধিকাংশ মানুষেরই জীবনটাকে সুন্দর করে সাজানোর পেছনে একটি প্রধান চাহিদা হল চাকরি। অনেকেই আবার ব্যবসা অথবা অন্য কোন কর্মসংস্থানের সুযোগ করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। তবে প্রত্যেকেরই মূল উদ্দেশ্য থাকে অর্থ উপার্জন। কেননা জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে অথবা সুন্দর ক্যারিয়ার গড়তে হলে অর্থের বিকল্প আর কিছু নেই। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই জেনে বা অজান্তে নিজের ক্যারিয়ারকে ধ্বংস করে দিচ্ছে নানা ভাবে। যে কারণে পিছিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ তার সুন্দর ক্যারিয়ারের লক্ষ্য থেকে।
ক্যারিয়ার ধ্বংস হওয়ার ১০ টি প্রধান কারণ
জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রত্যেকটা মানুষকে কর্মক্ষেত্রের যোগদান করতে হয়। আর কর্ম ক্ষেত্রেই হল মানুষের ক্যারিয়ার ধ্বংস হওয়া বা গঠন করার একমাত্র কর্মস্থান। যারা এই কর্মস্থানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারে, তারাই ক্যারিয়ার ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়। আর যারা নিজের মেধা, দক্ষতা এবং কঠোর পরিশ্রম দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে তাদের ক্যারিয়ার সুন্দর হয়।আজকে আমরা আমাদের এই প্রতিবেদনে জানবো কিভাবে একটি মানুষের ক্যারিয়ার ধ্বংস হতে পারে সেই সম্পর্কে।
(১) বিভ্রান্তি
বর্তমান সময়ের সোশ্যাল মিডিয়া অর্থাৎ ইমেইল, মোবাইল এপ্লিকেশন, নোটিফিকেশন বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন আমাদের বিভিন্নভাবে বিভ্রান্তি করে দিচ্ছে। প্রায়ই দেখা যায় বিভিন্ন ভুয়া তথ্য অথবা বিভিন্ন রকমের প্রতারণার শিকার হচ্ছে অধিকাংশ মানুষ। আর যার একমাত্র কারণ হলো সোশ্যাল মিডিয়া থেকে প্রতারকের ফাঁদে পা দেয়া। কেননা মানুষ অনেকটাই নির্ভরশীল এবং আস্থাশীল হয়ে পড়েছে এই সোশ্যাল মিডিয়া প্রতি। সুতরাং এটিও আমাদের ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দেয়ার একটি অন্যতম কারণ। তাই যতদূর সম্ভব নিশ্চিত না হয়ে সোশ্যাল মিডিয়া বা এই যাবতীয় কোন অনলাইন প্লাটফর্মে উপর এতটা আস্থাশীল হওয়া উচিত নয়।
(২) দুর্বল পরিকল্পনা
আমরা সবাই পরিকল্পনা করতে জানি। কিন্তু পরিকল্পনার শেষ পরিণতিটা সবসময় মানুষের পরিকল্পনার মত হয় না। অনেকেই আছে যারা পরিকল্পনা করে কাজটা শুরু করে। তবে কাজটা কবে শেষ হবে তার কোন পরিকল্পনা করা হয় না। এই ধরনের দুর্বল পরিকল্পনা একটা মানুষের ক্যারিয়ার পুরোপুরিভাবেই ধ্বংস করে দিতে পারে। নিজের ক্যারিয়ারকে সুন্দর করতে হলে অবশ্যই সঠিক পরিকল্পনা করে সামনে এগোতে হবে এবং সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত ও কাজ করতে হবে।
(৩) গড় মাসি
অনেকেই আছে অযথা কাজগুলোকে সময় থাকতেও ইচ্ছাকৃতভাবে ফেলে রাখে। বিশেষ করে স্টুডেন্ট লাইফে ছেলেমেয়েরা এই কাজ বেশি করে। সারা বছর শুয়ে বসে কাটালেও, পড়ার সময় পরীক্ষার আগ পর্যন্ত কখনো হয় না। আজকের কাজ কালকের জন্য ফেলে রেখে দেয়। এবং এভাবেই দেখতে দেখতে পরীক্ষা শেষ সময় টুকু চলে যায়। আর এখানেই নিজের ক্যারিয়ার নষ্ট করে দেয়। সুতরাং এই ধরনের কাছ থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিনই করতে হবে। আজকের কাজ কালকের জন্য ফেলে রাখা উচিত নয়।
(৪) মাল্টিটাস্কিং
অনেকেই আছে একসাথে অনেকগুলো কাজ করার ক্ষমতা দেখায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যে কয়টা কাজ করা পুরোপুরি সম্ভব সেই কাজগুলোই শুধুমাত্র করা উচিত। একসাথে অনেকগুলো কাজ করার ফলে কোন কাজটি সুস্থভাবে সম্পাদন হয় না। যে কারণে নিজের ক্যারিয়ার থেকে পিছিয়ে পড়তে হয় অনেক দূরে। সুতরাং অবশ্যই একের অধিক কাজ করার ইচ্ছা রাখতে হবে তবে অত্যাধিক কাজ একসাথে করে নিজের ক্যারিয়ার নষ্ট করা উচিত নয়। যতগুলো কাজ একসাথে করা সম্ভব শুধুমাত্র ততগুলোই করতে হবে।
আরো পড়ুন বেশি বুদ্ধিমান হতে যে খাবারগুলো খেতে পারেন! https://www.sbdfoodtips.xyz/2023/03/Be-more-intelligent-that-you-can-make-your-choice.html
(৫) টাইম পাস করা
অযথা বন্ধু-বান্ধবদের সাথে মিছিল, মিটিং, আড্ডা দেওয়া অথবা গ্যাদারিং করে সময় নষ্ট করা উচিত নয়। এটি ক্যারিয়ার নষ্ট হওয়ার অনেক বড় একটি কারণ। অযথা আড্ডা দিয়ে যে সময়টুকু ব্যয় করা হয় সেই সময় নিজের ক্যারিয়ারের জন্য কিছু করা উচিত। এতে যেমন আপনার ক্যারিয়ার তাড়াতাড়ি সুন্দরভাবে গঠন করতে পারবেন তেমনি সময়ের অপচয় কম হবে।
(৬) মনোযোগের অভাব
ক্যারিয়ার ধ্বংস হওয়ার একটি প্রধান কারণ হলো মনোযোগের অভাব। অর্থাৎ অমনোযোগী। আপনি যে কাজই করেন না কেন বা যাই করেন না কেন অমনোযোগী হলে তা কখনোই সম্পূর্ণ সঠিকভাবে করা সম্ভব নয়। লেখাপড়ার ক্ষেত্রে যেমন অমনোযোগী হলে পরীক্ষার রেজাল্ট কখনো ভালো হয় না। তেমনি যে কোন কাজ করতে গেলেও অমনোযোগী হয়ে কাজ করলে সেটি সঠিকভাবে করা সম্ভব হয় না। সুতরাং অবশ্যই যে কোন কাজে মনোযোগী হতে হবে।
(৭) গুরুত্বহীন কাজ
ক্যারিয়ার অর্জন করতে সর্বপ্রথম প্রয়োজন লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে যেসব কাজ যুক্ত নয় বা গুরুত্বপূর্ণ প্রাসঙ্গিক নয় সেসব কাজ করে অযথা সময় নষ্ট না করা। হতে পারে এটি আমাদের ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কারণ। সুতরাং অবশ্যই সেই সকল গুরুত্বহীন কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখা উচিত। যে কাজগুলো আমাদের ক্যারিয়ার গঠনের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়।
(৮) অপেক্ষা করা
অন্য কারোর জন্য অপেক্ষা করা অথবা কোন কিছু হওয়ার জন্য অপেক্ষা করা এটি জীবনের অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট করে দেয়। সুতরাং অপেক্ষা না করে নিজেকে ক্যারিয়ার গঠনের নির্দিষ্ট লক্ষ্যে জন্য কাজ করতে হবে। ক্যারিয়ার গঠনের সবচেয়ে বেশি যেটি গুরুত্বপূর্ণ তা হল কঠোর পরিশ্রম করা এবং তা লক্ষ্য অর্জনের প্রাসঙ্গিক হতে হবে।
(৯) সবকিছুতে নিখুত খোঁজা
অনেকেই আছে যারা সবকিছুই পারফেক্ট অথবা নিখুত খোঁজার চেষ্টা করে। যে কারণে অনেক সময় এটি সময় সাপেক্ষ এবং অপ্রয়োজনীয় চাপের দিকে নিয়ে যেতে পারে। সুতরাং এটিও হতে পারে জীবনে ক্যারিয়ার গঠনের একটি অন্যতম কারণ। তাই সবকিছুতেই নিখুঁত খোঁজাটা উচিত নয়। সময়ে উপযোগী হলেই তা মেনে নেওয়া উচিত।
(১০) ধৈর্যশীলতার অভাব
জীবনে ঘাত প্রতিঘাত বাধা-বিপত্তি অথবা পরাজয় বারবার আসতেই থাকে। তার জন্য নিজেকে কঠোর থেকে কঠোর ধৈর্যশীল হতে হয়। অনেকেই আছে যারা সফলতা অথবা ক্যারিয়ারের দ্বারপ্রান্তে গিয়েও হারিয়ে যায় কালের গহব্বরে। কেননা তারা ধৈর্যহীন হয়ে পরে। সুতরাং জীবনে সফলতা পেতে হলে অথবা ক্যারিয়ার গঠন করতে হলে অবশ্যই ধৈর্যশীল হতে হবে ।ধৈর্যশীলতা ক্যারিয়ার গঠনের অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
তরুণদের ক্যারিয়ার গঠনে করণীয়
জীবনে ক্যারিয়ার গঠনের লক্ষ্য সৃষ্টি হয় তরুণ তরুণীদের সময় থেকে। কারণ এটাই ক্যারিয়ার গঠন করার প্রথম পদক্ষেপ। তরুণ তরুণীদের খামখেয়ালিপনা তাদের সাবলীল ক্যারিয়ার গঠনের প্রধান অন্তরায়। কেননা তাদের উদ্দেশ্যহীন চলার পথ কখনো কোমল নয়। বরং বেশিরভাগ সময় কাটাযুক্ত হয়ে থাকে। মূলত নিজেদের প্রতি আস্থাশীলতা ভোগা, নিজের জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণের ব্যর্থতা, অগ্রাধিকার নির্ধারণে ব্যর্থতা, সুপরিকল্পনার অভাব, সময়ের যথাযথ ব্যবহার, অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা ইত্যাদি কারণে এখনকার অধিকাংশ তরুণীদের মানসম্মত ক্যারিয়ার গঠন সম্ভব হয়ে ওঠে না। এবং এর সাথে রয়েছে রাজনৈতিক এবং সামাজিক নানাবিধ সমস্যার শক্তিশালী প্রভাব। যা তাদের ক্যারিয়ারকে পুরোপুরি ভাবে ধ্বংস করে দেয়। সুতরাং তরুণ তরুণীদের ক্যারিয়ার গঠনে এইসব বাধা-বিপত্তি গুলো কাটিয়ে উঠতে হবে। তাদের স্বীয় প্রতিভা এবং দক্ষতা শনাক্তকরণ করে তা কাজে লাগাতে হবে। তাদের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য প্রণয়ন করতে হবে। জীবনের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করতে দৃঢ় সংকল্প করতে হবে। স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। শিক্ষা অর্জন এবং মেধার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। সময়ের সাথে সাথে সময়ের যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। সময়ের গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে। সমাজের সার্বিক ব্যবস্থা বিবেচনা করে তাকে প্রতি পদক্ষেপে কাজ করতে হবে। এবং ধৈর্যশীল হয়ে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। এটা একজন তরুণ অথবা তরুনীর ক্যারিয়ার গঠনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
Disclaimer
বন্ধুরা আশা করি ক্যারিয়ার গঠনের দশটি কারণ অথবা কিভাবে জীবনে সফলতা অর্জন করা যায় সে সম্পর্কে আপনারা জানতে পেরেছেন। এছাড়াও যদি আরো কিছু জানার থাকে তবে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। এতক্ষণ কষ্ট করে লেখাটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।